দুর্নীতি প্রতিরোধের প্রথম দুটি পদক্ষেপ হচ্ছে সংগঠিত দুর্নীতির জন্য সচেতনতা

একটি দেশ কতটা সভ্য তা বিচার করার অনেক মানদণ্ড থাকতে পারে, তবে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল দুর্নীতির বিষয়টি। দুর্নীতি যখন একটি দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্থায়ী স্থান দখল করে, তখন তা সে দেশের মাথার ভেতরে ফুটন্ত বিষের মতো হয়ে যায়। দায়মুক্তির সংস্কৃতি দুর্নীতির আগুন জ্বালাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। দুর্নীতি প্রতিরোধের প্রথম দুটি পদক্ষেপ হচ্ছে সংগঠিত দুর্নীতির জন্য সচেতনতা এবং উপযুক্ত বিচার তৈরি করা। বাংলাদেশে আমরা বর্তমানে এই দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করছি তাতে কোনো সন্দেহ নেই।



দুর্নীতি কিভাবে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে একটা কৌতুক বলি।


একটি ছোট মেয়ে তার বাবাকে তার বাবাকে বলে দুর্নীতি কি?


তখন আমার বাবা আমাকে বললেন আমাকে একটা বিয়ার নিয়ে আসতে, তারপর আমি বলবো দুর্নীতি কাকে বলে।


কিন্তু আমার মা তোমাকে পান করতে নিষেধ করেছেন, মেয়েটি বলল, বাবা।


শোন, মামুনী, তুমি যখন আমার জন্য বিয়ার নিয়ে আসবে, তখন আমাকে কিছু আইসক্রিম নিয়ে আসবে।


আচ্ছা বাবা, আমি এখন এটা নিয়ে যাচ্ছি, তাই মেয়েটি পালিয়ে গেল।


আজকাল নিরপরাধ মানুষকে ছোটখাটো ঘুষ দেওয়া বা নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে দুর্নীতির যে ক্ষুদ্র বীজ জন্মেছিল, তা আজ স্বাধীনতার ৫০ বছরে বিশাল মহরতে রূপ নিয়েছে। সভ্য ও উন্নত দেশের কাতারে যেতে হলে আমাদের এই বিশাল বিষাক্ত গাছের ডালপালা ধীরে ধীরে ছেঁটে দিতে হবে। ধরে নিলাম বিশাল গাছটি কাটা যাবে না, সময়মতো ধ্বংস করতে হবে। পৃথিবীর কোনো দেশে দুর্নীতি যেমন নির্মূল করা যায় না, তেমনি বাংলাদেশ থেকেও তা নির্মূল করা যায় না। কিন্তু এটাকে একটা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে উন্নীত করা উচিত যাতে মানুষ দুর্নীতির ভয় পায় বা সেটা করার আগে হাজার বার চিন্তা করে।


বার্লিন-ভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) দ্বারা পরিচালিত গ্লোবাল করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স (সিপিআই 2020) সূচকে 180টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান 12তম। 2019 সালে, বাংলাদেশ সর্বনিম্ন র্যাঙ্কিংয়ে 14 তম স্থানে ছিল। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন এই ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নয়। সত্য হল অন্ধ হলে দুর্যোগ থামবে না। তাই দুর্নীতি বন্ধ করতে সবার আগে প্রয়োজন সৎ উদ্দেশ্য। কারণ বিচার বিভাগ থেকে আমলাতন্ত্র, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শিক্ষা, সর্বত্রই দুর্নীতির কথা শোনা যায়।


গত বছরের শেষ দিনে অর্থাৎ 31 ডিসেম্বর, 2021 তারিখে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে “সরকারি সার ৬১৯ কোটি টাকা অনুপস্থিত” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চলতি মাসের ২৯ তারিখ জাগোনিউজ২৪-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল "সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এতিমদের তহবিল অপব্যবহারের অভিযোগ"। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে, প্রতিদিন অনেক শিরোনাম আসছে।


দুর্নীতি প্রতিরোধের ব্যাপারে আমরা কতটা আশাবাদী তা নিয়ে আমরা আপনাদের সাথে একটি ছোট্ট পালিশ কৌতুক শেয়ার করি। একবার 3 জন বৃদ্ধ ঈশ্বরের সাথে দেখা করতে গেলেন।


প্রথম ব্যক্তি, একজন আমেরিকান, ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "প্রভু, কবে আমার দেশ থেকে বর্ণবাদ দূর হবে?"


ঈশ্বর বলেছেন 100 বছর লাগবে।


আর এই বৃদ্ধের কথা শুনে তিনি কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, আমি তখন দেখতে বাঁচব না।


দ্বিতীয় বৃদ্ধ, যিনি রাশিয়ান, ঈশ্বরকে বললেন, প্রভু, আমার দেশে আমেরিকার মতো গণতন্ত্র কবে আসবে?


ঈশ্বর উত্তর দিলেন যে 50 বছর লাগবে।


শুনে বৃদ্ধা কেঁদে বললেন, ইশ, আমি দেখতে আসব।


এবার বাংলাদেশ থেকে আসা ৩য় বৃদ্ধ আল্লাহ বললেন, বাংলাদেশ কবে দুর্নীতিমুক্ত হবে?


প্রশ্ন শুনে স্বয়ং ভগবান কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, আমি হয়তো দেখতে পাব না।


রসিকতাই কৌতুক। আমরা বাঙালি বলেই আমরা আশাবাদী। আমাদের স্বাধীনতার 50 বছরে, আমরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। এখন স্বপ্ন দেখি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের। আমি বেঁচে থাকতে এমন বাংলাদেশ দেখব বলে আশা করি।

 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url